সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা মেঘনার অব্যাহত ভাঙনের ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছেন পর্যটন অপার সম্ভাবনাময় জনপদ। মেঘনার তীব্র স্রোতে চর্তুদিক থেকে ভেঙ্গে কেবলই ছোট হয়ে আসছে। গত কয়েক বছরে মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে হাজার হাজার একর ফসলি জমি,ঘর বাড়ি হারিয়ে মানুষ এখন নিঃস্ব। সহায় সম্বল ভিটে মাটি হারিয়ে মানুষ বেড়ীর ঢালে জেগে উঠা কলাতলী চর,কাজীর চর মাথা গোঁজার ঠাই নিয়েছে। কয়েক বছরে মেঘনার ভাঙ্গনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান,গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা,মসজিদ,মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে হাজির হাট ইউনিয়ন এখন তীব্র ভাঙ্গনের কবলে। হাজির হাট ইউনিয়নের নাইবের হাট,সোনারচর গ্রামের অর্ধাংশ,চরঞ্জান,দাসের হাট প্রায় সম্পূর্ণ নদীর গর্ভে বিলীন। তীব্র ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে হাজীরহাটের আঃ লতিফ ভুঁইয়া বাড়ী সংলগ্ন পশ্চিম পাশে পাকা বেড়ীবাঁধ,দাসের হাটের কালির টেক সংলগ্ন পাকা বেড়ীবাধ,চৌধুরী বাজারের পূর্বপাশে মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে কেবলই ভিতরে ঢুকছে। মনপুরা ফিশারিজ লিঃ অর্ধাংশ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সোনারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙ্গনের হুমকির মুখে। যে কোন সময় স্কুলটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
মনপুরা ইউনিয়নের উত্তর মাথা দিয়ে স্থায়ী ব্লক ফালানোর ফলে ভাঙ্গন রোধ হয়েছে। এছাড়া একই ইউনিয়নের কাউয়ারটেক,সীতাকুন্ড,ঈশ্বরগঞ্জ মৌজার পূর্বাংশে অধিকাংশ গ্রাম নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মনপুরা ইউনিয়নের ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত স্থান নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিটে মাটি হারিয়ে পথে বসতে শুরু করেছে।
একইভাবে উত্তর সাকুচিয়া ও দক্ষিণ সাকুচিয়া মেঘনার ভাঙ্গনে কেবলই ছোট হয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের হেলাল তালুকদার বাড়ি সংলগ্ন পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে মেঘনার তীব্র ভাঙ্গনের ফলে কেবলই ছোট হয়ে যাচ্ছে। পাকা বেড়ীবাঁধটি অধিকাংশ ভেঙ্গে গেছে। যেকোন মুহূর্তে পাকা বেড়ীবাঁধটি ভেঙ্গে ভিতরে জোয়ারের পানি তলিয়ে যাবে। পানি বন্ধী হয়ে পড়বে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন। তালতলা সূর্যমুখী খাল সংলগ্ন বেড়ীবাঁধ ভাঙ্গনের হুমকির মুখে। উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাষ্টারহাট বাজারের পশ্চিমপাশে মেঘনার ভাঙ্গনের ফলে কেবলই ছোট হয়ে আসছে। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে মনপুরা সম্পূর্ণ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে মূল ভূখণ্ড থেকে মনপুরার মানচিত্র। দ্রুত নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছেন ভাঙ্গন কবলিত এলাকার হাজারো মানুষ।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের দাবি সরকার যদি ভাঙ্গন কবলিত এলাকার স্থানগুলো স্থায়ী ব্লকের ব্যবস্থা করে তাহলে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষা করা সম্ভব। প্রতিবছর রিং বেড়ীবাঁধ ও জিও ব্যাগ ফেলে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ-অপচয় না করে স্থায়ী ব্লকয়ের ব্যবস্থা করা হোক। বিকল্প ভাবে সরকার যদি কলাতলী টু মনপুরা বাঁধ নির্মাণ করে তাহলে স্থায়ীভাবে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে। হাজার হাজার একর ফসলি জমি জেগে উঠবে। পুনর্বাসন হবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা যদি সঠিক পরিকল্পনা করে স্থায়ী ব্লক ও ডাম্পিং এর ব্যবস্থা করে তাহলে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় রোধ হবে। রক্ষা হবে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দ্বীপ পর্যটন অপার সম্ভাবনাময় মনুরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেলিনা আক্তার চৌধুরী বলেন,মনপুরা পর্যটনের অপার সম্ভাবনায় স্থান। মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে মনপুরা। মেঘনার ভাঙ্গন রোধে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প তৈরি করে ব্লক ও ডাম্পিং ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহর রহমতে মনপুরার উত্তর মাথা ভাঙ্গন রোধ হয়েছে। এছাড়াও ভাঙ্গন রোধের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। মেঘনার ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
Leave a Reply